লটকন বা নটকো স্থানীয়ভাবে বুগি ও আঁশফল নামে পরিচিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ দেশীয় জাতের ফল লটকন। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণে ভরপুর লটকনকে একসময়ে জংলি ফল বলা হতো। বন-বাদাড়ে ঝোপঝাড়ে জন্ম নেওয়া গাছে ধরে থাকতো এ ফল। তেমন একটা কদর ছিল না। তবে সময়ের ব্যবধানে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা। তাই ফলটির কদর বেড়েছে বহুগুণ। এই ফলের বৃক্ষ মাঝারি আকারের চিরসবুজ। ফল গোলাকার, পরিপক্ব হলে এ ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana এক প্রকার টক মিষ্টি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং বি-২ আছে,এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত- Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ra mai ইত্যাদি। গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিক চাষ হয়। সাধারণত মিষ্টি ফল হলেও ছায়াযুক্ত জায়গায় এই গাছের ফল টক স্বাদযুক্ত। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে সময় এটি পরিপক্ক হয়।
এটি মূলত বর্ষাকালীন ফল। এটি এক প্রকার হলুদ রঙের ছোট্ট গোলাকার ফল। টক মিষ্টি স্বাদের এ ফলটি খেতে অনেকেই ভীষণ পছন্দ করেন। আবার অনেকের কাছে লটকনের স্বাদ খুব বেশি ভালো লাগে না। তবে রসালো এই ফলটি খেলে মিলবে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা, যেটা আমরা অনেকেই জানি না। লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক, থায়ামিন,ভিটামিন বি, সি ইত্যাদি এবং প্রোটিন ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
লটকনের উপকারিতা
লটকনে জলীয় অংশ অর্থাৎ পানির পরিমাণ বেশি থাকে। এটি খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে ত্বকে নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত লটকন খেলে চর্মরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এটি ত্বকের রুক্ষতা ও ত্বক ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
বর্ষায় ফ্লু, জ্বর, সর্দি, কাশির সংক্রমণ হতে পারে। নিয়মিত লটকন খেলে এ সব সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধ হয়।
লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শরীরের ঘা তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বক, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে। প্রতিদিন দুই-তিনটি লটকন খেলে ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়। এতে স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ হয়।
লটকনের ভিটামিন বি বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চোখের রক্তনালীর সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কী খাবেন
সতর্কতা
প্রতিদিন ৩-৪ টি লটকন অনায়াসে খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত লটকন খেলে ক্ষুধামন্দা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কিডনি রোগীদের কম খেতে বলা হয় এটি। কিডনি রোগীরা লটকন খেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।