রক্ত কাঞ্চন (Bauhinia variegata) বসন্তের ফুল।সৌন্দর্যে অতুলনীয়। কাঞ্চন পত্রমোচি। শীতের শেষেই পাতা ঝরে যায়, আর বসন্তের শুরুতে নিষ্পত্র শাখা জুড়ে বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুলে ভরে যায়। এর মেজেন্টা রং প্রকৃতিতে আনে এক অন্যরকম সৌন্দর্য। ৫ পাপড়ির মধ্যে একটি বড় ও গাঢ় রঙের, তাতে কারুকার্য। ফুলের মাঝে কাস্তের মতো বাঁকানো পরাগদণ্ড থাকে।
Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত রক্ত কাঞ্চনের ইংরেজী নাম Mountain Ebony, orchid tree, camel’s foot tree, বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia variegata কাঞ্চনার, কাঞ্চনক, পাকারি, রক্তপুষ্পক, লালকাঞ্চন।
বসন্তের মাঝামাঝি গাছে নতুন পাতা গজায়। পাতা সবুজ, শিরা উপশিরা স্পষ্ট। পাতার অন্যরকম বৈশিষ্ট্য—একই বোঁটার পাতা মাঝে দু’ভাগে বিভক্ত। আবার দুটি পাতা জোড়া দিলে একটি অন্যটির সঙ্গে সমানে সমান। অন্য যেকোনো গাছের পাতার চেয়ে অনেক বেশী আলাদা হয়। পাতা গুলি হৃদয় আকৃতির মাঝারি সাইজের হয়। পাতা দেখে খুব সহজেই কাঞ্চন গাছ চেনা যায়। তবে সেটি কোন কাঞ্চন তা পাতা দেখে অনুমান করা কঠিন।
ফুল শেষে গাছে ফল হয়, ফলে বীজ হয়। ফল দেখতে শিমের মতো চ্যাপটা, রং প্রথমে সবুজ ও পরিপক্ব হলে কালচে রং ধারণ করে এবং শুকিয়ে একসময় আপনাআপনিই ফেটে গিয়ে বীজগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিপক্ব বীজের রং কালচে খয়েরি। গাছ বেশ কষ্টসহিষ্ণু। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা যায়।
রক্তকাঞ্চনের রয়েছে ভেষজ নানান রকম গুণ। উঁচু ভূমি, রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ থেকে হালকা ছায়াযুক্ত স্থান ও প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফুলগাছ জন্মে।
অনেকই রক্তকাঞ্চন ফুলকে দেবকাঞ্চনের সাথে মিলেয়ে ফেলে। দুটি আলাদা করার সবচেয়ে সহজ বিষয় হচ্ছে ফুল ফুটার সময়। দেবকাঞ্চন ফুটে হেমন্ত ও শীতে। এই সময় রক্তক্ঞ্চন ফুটে না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফুলের পাপড়ি। দেবকাঞ্চনের পাপড়ি মুক্ত, আর রক্তকাঞ্চনের পাপড়ি একটার উপরে আরেকটি উঠে আসে।