অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর ইংরেজি নাম Butterfly Pea বাটারফ্লাই পি। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম Clitoria ternatea ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প। ফুলের ভেতরের আকৃতির জন্যই এ নাম। কেরালায় একে বলে শঙ্খপুষ্পী।
নীল রং ছাড়াও সাদা, হালকা বেগুনি, হলুদ ও লাল রঙেরও অপরাজিতা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। বহুবর্ষজীবি লতানো এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট উদ্ভিদ। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা। গাঢ় নীল বলে একে নীলকণ্ঠ নামেও ডাকা হয়।
সাধারণত বর্ষাকালে গাছের ডাল স্যাঁতসেঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়। আবার ছোট ছোট ধূসর ও কালো রঙের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে লাগালেও গাছ হয়। বীজ থেকে চারা গজাতে প্রায় মাস খানিক সময় লেগে যায়।অনেকে বারান্দায় কিংবা ছাদে রোপণ করে থাকে এই গাছটি। বাড়ির সামনে জায়গা থাকলে মাটিতেও রোপণ করা যায়। অল্প বা বৃহৎ পরিসরে, দুভাবেই অপরাজিতা অনায়াসে বেড়ে ওঠে।
আশপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি তরতর করে বেড়ে ওঠে, ফুলে-পাতায় বিকশিত হয়।ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
লতাজাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এ ফুল হয়।অপরাজিতা ফুলের বয়স অন্তত পাঁচ কোটি বছর। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এ ফুলের দেখা মেলে।
নীল অপরাজিতা বার মাসই ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি নয়। অপরাজিতা ফুল গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালোবাসে।
নানা গুণের নীল অপরাজিতা
এই ফুল, লতা, পাতা, শিকড়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
লিভার সুরক্ষা:
অপরাজিতার নীল চা পলিফেনল ও ফ্লাভোনোয়েড যৌগ লিভার এনজাইমের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই লিভারের সুরক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করে অপরাজিতার ফুলের চা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
অপরাজিতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে অপরাজিতা।
অ্যাজমা প্রতিরোধ:
অপরাজিতায় বিদ্যমান স্যাপোনিন ও ফ্লাভোনোয়িড যৌগ অ্যাজমা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ক্যানসার প্রতিরোধ:
অপরাজিতায় থাকা অ্যান্থোসায়ানিন মানব দেহে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরিতে বাধা দেয়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অপরাজিতা:
অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় অপরাজিতাকে ব্যবহার করে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ এই ফুল স্মৃতিশক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়:
এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডস, কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ কমায়। তাই হৃদ্রোগের ঝুঁকি মুক্ত থাকতে ডায়েটে বেছে নিতে পারেন অপরাজিতার চা কে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বয়ঃসন্ধিকালীন উন্মাদ রোগ, গলগন্ড রোগ, ফোলা রোগ, ঘন ঘন প্রস্রাব, স্বরভঙ্গ, শুষ্ক কাশি, আধকপালে ব্যথা ইত্যাদি রোগে অপরাজিতার মূল, ফুল পাপড়ি, গাছের লতাপাতা, মূলের ছাল ও বীজ ব্যবহার হয়ে থাকে।
প্রাচীন এই ফুলটি ১২ মাস ফুটলেও মূলত এটি একটি বর্ষার ফুল। বিশেষজ্ঞরা বলছে, এই ফুল এবং এর অন্যান্য উপাদান যেমন মূল, বীজ থেকে উপকার পেতে চাইলে অবশ্যই পরিমাণের ওপর নজর দিতে হবে। এসব উপাদান থেকে তৈরি রস ১/২ চামচ এর বেশি সেবন করা উচিত নয়। কেননা বেশি পরিমাণে রস সেবনে শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।