মেক্সিকো থেকে আসা মেক্সিকান রূপসী Cosmos খুবই সুন্দর একটি ফুল। মেক্সিকো থেকে বাংলাদেশে এসেছে সে অনেক অনেক আগে, প্রায় ডালিয়া আর গাঁদার কাছাকাছি সময়ে। অনেক আগে এসেছে বলে সরা বাংলাদেশেই একে চোখে পড়ে এখন। জন্মস্থান মেক্সিকো হলেও এখন পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মৌসুমি ফুলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই কসমস।
সে তার রূপে সবাইকে মুগ্ধ করে শীতকালীন বাগানে জায়গা করে নিলেও এখন পর্যন্ত তার কপালে একটি ভালো বাংলা নাম জোটেনি। তবে তার ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম Cosmos ব্যাপক ভাবে বাংলায় প্রচার পেয়েছে এবং এটি উচ্চারনে সহজ বলে এটিই তার বাংলা নাম হয়ে গেছে বলা চলে।
ইংরেজি নাম garden cosmos, Mexican aster। সাধারণত এটিকে কসমস বা মেক্সিকান এষ্টার বলে ডাকা হয়। এটি একটি মাঝারি আকৃতির herbaceous উদ্ভিদ। এই প্রজাতি এবং এর বিভিন্ন ধরনের জাতগুলি শীতকালীন আবহাওয়ায় উদ্যানগুলিতে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসাবে জনপ্রিয়।
Common Name : Cosmos, Garden Cosmosr, Mexican aster.
Scientific Name: Cosmos bipinnatus এবং Cosmos sulphureus.
শীতের ঝলমলে রোদে অনেকদূর থেকেই নজর কাড়ে কসমস। কসমসের সৌন্দর্যে শুধু মানুষ নয়, প্রজাপতি ও কীটপতঙ্গ সহজেই আকৃষ্ট হয়। কসমস ছাড়া শীতের বাগান অনেকটাই অসম্পূর্ণ মনে হয়। মূলত শীতের ফুল হলেও এদের দুএকটি রকমফের প্রায় সারা বছরই ফুটতে দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ফুলের পূর্ণ মৌসুম।
গোলাপী, সাদা, বেগুনী ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুল অনেকদিন সতেজ থাকে। ফুলের কথা বাদ দিলেও শুধু পাতার সৌন্দর্যেও এরা অনন্য। অনেকটা গাজরের পাতার মতো এদের পাতাও সরু সরু ফালিতে বিভক্ত। কসমস প্রধানত সিঙ্গেল ও ডাবল এই দুই রকমের হয়ে থাকে।
পাতার কিনারগুলো খাঁজকাটা থাকে। শীতকালে বাজারে এ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। কসমস ফুল ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুল ফোটে। কসমস প্রজাতির মধ্যে বর্ষাতি কসমস অন্যতম। কসমসের বীজ দ্রুত ছড়ায় এবং খুব কম সময়ের মাঝেই আশেপাশের এলাকা দখল করে ফেলতে পারে।মাটিতে বীজ পড়লেই এটা জন্মানো শুরু করে।
হালকা আর্দ্রতায় ৭ থেকে ১০ দিনের মাঝে এর অঙ্কুরোদগম ঘটে। তবে বহুবর্ষজীবী কসমস জন্মায় রাইজোম (এক ধরণের বিশেষায়িত মূল) থেকে। শীতের শেষে কসমস জৌলুস হারাতে শুরু করে। পাপড়িগুলো শুকিয়ে গিয়ে গোড়াতেই সরু সরু বীজ হয়। শীতের শেষের দিকে কিছু ফুল গাছেই শুকিয়ে যেতে দিন। পরে ডাল সহ কেটে উলটো করে ঝুলিয়ে শুকাতে দিন। ফুলের মাঝের অংশে বীজ কালো হয়ে গেলে এগুলোকে সংগ্রহ করুন। পরবর্তী বছরের জন্য জমিয়ে রাখতে পারেন একটি কাগজের খামে।
এই বীজ শুকিয়ে সংগ্রহ করে রেখে পরের বছর সময়মতো সেই বীজ মাটিতে ছড়িয়ে দিলে সহজেই চারা জন্মে। পূর্ণ সূর্যালোকে এবং কিঞ্চিত ছায়াযুক্ত জায়গায়ও জন্মায়। অঙ্কুরোদগমে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। ফুল দেওয়া শুরু করে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে। সাধারণত ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা পায়।
কসমসের নানান রকম ঔষধী গুণ রয়েছে।
বিষফোড়া সারাতে : প্রথমে কসমস গাছের পাতা বেটে নিতে হবে। এরপর এই পাতা বাটা ফোড়ার ওপর প্রলেপ দিতে হবে। জিভের ক্ষত নিরাময়ে : প্রথমে কসমস গাছের মূল বেটে নিতে হবে। এরপর এই বাটা ঘি এর সাথে গরম করে জিভে লাগালে এটি ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রসাবের জ্বালা নিরাময়ে : কসমস গাছের পাতা নিয়ে থেঁতো করে পানিতে মিশিয়ে এর সাথে চিনি মিশিয়ে সকাল বিকাল খেলে প্রসাবের জ্বালা যন্ত্রণা কমে।
চুলকানি নিরাময়ে : প্রথমে কসমস গাছের পাতা থেঁতো করে নিতে হবে। এরপর এটি অল্প পানিতে দইয়ের মত কেরে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এটিকে চুলকানি এর স্থানে মাখলে চুলকানিতে ভাল উপকার পাওয়া যাবে।