ধবধবে সাদা বর্ণের শুভ্রসুন্দরী ফুল এই সাদা বা শ্বেত কাঞ্চন মূলত গুল্মজাতীয় গাছ। শ্বেতকাঞ্চন ফুলটিকে সংস্কৃত ভাষায় ‘শিবমল্লি’ নামে উল্লেখ করা হয়। ‘ড্রাফট হোয়ইট অর্কিড’ নামেও ইংরেজিতে এর নাম পাওয়া যায়। ফুলটি ধবধবে সাদা, তবে গন্ধহীন। শাখা-প্রশাখার মাথায় ফুল ফোটে। এ ফুটন্ত ফুলগুলো দূর থেকে দৃষ্টি কাড়ে।
শ্বেতকাঞ্চনের ইংরেজি নাম Dwarf White Bauhinia, White Orchid-tree and Snowy Orchid-tree.। এর বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia acuminata.। এটি হচ্ছে Fabaceae পরিবারের একটি গুল্ম প্রজাতি। এদের বিস্তৃত চাষাবাদের জন্য আদি নিবাস বোঝা না গেলেও মনে করা হয় এরা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া (জাভা, বোর্নিও, Kalimantan, Lesser Sunda Islands) এবং ফিলিপাইন থেকে এসেছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
গ্রীষ্ম ও বর্ষায় বনে-বাদারে দেখা মেলে এই ফুলের।শ্বেত কাঞ্চন চির সবুজপত্র মোচী ফুলগাছ। বাংলাদেশের বন জঙ্গল, পাহাড়ি এলাকা, পারিবারিক বাগানে এ ফুল জন্মাতে দেখা যায়। নামের সঙ্গে ফুলের মিল হুবহু। ফুল ধবধবে সাদা, তবে গন্ধহীন।
প্রায় সারা বছর গাছে শ্বেত কাঞ্চন ফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্ষাকালে এ ফুলের শোভা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বসন্তের প্রথম দিকে ডালপালাজুড়ে থাকে শুধুই ফুলের উৎসব। সাদা বা শ্বেত কাঞ্চন মূলত গুল্মজাতীয় গাছ। তবে কখনো কখনো একটু বড়ও হতে পারে। এদের কাণ্ড নিচু, শাখা-প্রশাখা অনেক এবং কিছুটা ছড়ানো ছিটানো ধরনের।
কাঞ্চনের পাতা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। দুটি পাতা জোড়া দিলে দেখতে যেমন, পাতার শেষ প্রান্ত অবিকল সে রকম। কাঞ্চন গাছ শীতকালে সব পাতা ঝরিয়ে একেবারে মরার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এ অবস্থাতেই গাছ জুড়ে দুধসাদা রঙের ফুলের মেলা বসে।
ফুলগুলো পাতার কোলে গুচ্ছবদ্ধভাবে ফুটতে থাকে, পাপড়ি সংখ্যা ৫, ৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং মুক্তভাবে ছড়ানো। গাছে ফুল অবশিষ্ট থাকতেই শিমের মতো চ্যাপ্টা ফল ধরে। ফলগুলো একসময় শুকিয়ে গিয়ে আপনা আপনিই ফেটে যায়। তখন বীজগুলো ছড়িয়ে পড়ে।
শ্বেত কাঞ্চন ফুলের উপকারিতা-
কাঞ্চন গাছের বাকল থেকে ট্যানিং, রঙ ও দড়ি তৈরি করা যায়।
ক্ষত নিরাময়েঃ
শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে শ্বেত কাঞ্চন ফুল এর পাতা কাজে লাগানো যায়। প্রথমে এর পাতা নিয়ে থেতো করে নিতে হবে। এরপর এটি ক্ষত স্থানে প্রলেপ দিলে ক্ষত দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
কুষ্ঠ রোগ নিরাময়েঃ
প্রথমে শ্বেতকাঞ্চন গাছের পাতা নিয়ে পিষে একটি মণ্ড করে নিতে হবে। এরপর এই মণ্ড কুষ্ঠ রোগের ঘায়ে লাগালে ঘা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
বিষ কাটাতেঃ
প্রথমে শ্বেতকাঞ্চনের শিকড় সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর এই পানি ছেকে সেবন করলে সর্প দংশনের বিষ নেমে যায়।
পেটের পীড়া নিরাময়েঃ
শ্বেতকাঞ্চন গাছের পাতা ও ছাল সিদ্ধ করে এই ক্বাথ মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে পেটের পীড়ায় উপকার পাওয়া যায়।
হাপানি নিরাময়েঃ
প্রথমে শ্বেত কাঞ্চন গাছের ছাল পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে।এবার এই কাপ সকাল ও বিকালে সেবন করলে হাঁপানি রোগে ভাল উপকার পাওয়া যায়।