নন্দিনী বাংলাদেশে ইউস্টোমা নামেই বেশি পরিচিত। কেউ কেউ বলেন লিসিয়েন্থাস।ফুল দেখতে গোলাপের মতো, তবে কাঁটা নেই। গোলাপ শীতকালে ভালো ফোটে; আর জাপানি এই ফুল ফোটে শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই। খরা ও বর্ষাসহিষ্ণু এই ফুলের সংরক্ষণকালও গোলাপের চেয়ে বেশি। অন্তত আট রঙে এই ফুল ফোটে।
নন্দিনী ফুলের ইংরেজি নাম লিসিয়ানথাস। বৈজ্ঞানিক নাম এস্টোমা গ্রান্ডিফ্লোরাম। Gentianaceae পরিবারভুক্ত জেনেটিনসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ । ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বত এলাকায় ইউস্টোমার উৎপত্তি। মেক্সিকো, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশের উষ্ণ অঞ্চলেও এই ফুল ফোটে।
পাঁপড়িগুলো গোলাপের মতো হলেও খাড়া পাতা সমেত ডগা অনেকটা টিউলিপ ফুলের মতো। ফুলের পাঁপড়িতে ছোপ ছোপ করে থাকা বিভিন্ন রংয়ের ছোঁয়া ফুলটিকে দিয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য।কাট-ফ্লাওয়ার হিসেবে এর জুড়ি নেই। অনেকে কৃতিম ফুল বলে ভুল করে। রঙের বৈচিত্র্যের জন্য অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জাপান ও চীনের ফুলের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। জাপানের বাজারে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ জাতের নন্দিনী পাওয়া যাচ্ছে।বাংলাদেশেও এ ফুল অল্পদিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রঙরূপের এত বৈচিত্র্য অন্য কোনো ফুলে সাধারণত দেখা যায় না। ছয়টি পাঁপড়ি ঘিরে রেখেছে একটি স্ত্রী কেশর এবং পাঁচটি পুংকেশরকে। সরলপত্র বিন্যাসের এ ফুলের পাতাগুলোর সম্মুখ প্রান্ত কিছুটা তীক্ষ্ণ।
আমেরিকায় আমেরিকান গোলাপ নামে পরিচিত। মূল কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত। পাতার রং নীলাভ সবুজ।কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলের জগতে এর অবস্থান সবার ওপরে। প্রতিটি গাছে একক ও দ্বৈত রঙে ৮০টির অধিক ফুল দেখা যায়। ফুল তোলার পর প্রায় ২০ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩৫ থেকে ৪০ দিন সতেজ থাকে। চারা লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যে ফুল তোলা যায়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী নন্দিনী ৬.০-৬.৭ পিএইচ, দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভাল জন্মে। এর বীজের আকার খুবই ছোট। গ্রীন হাউসে এর চারা উৎপাদন করতে হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উন্নত মানের মিহি মাটি বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রয়োজন। অঙ্কুরোদগমের জন্য সাধারণত ১০-১২ দিন লাগে। চারায় চার জোড়া পাতা হলে চারা মাঠে রোপণ করা যায়। জমি ভালভাবে আড়াআড়ি চাষ দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে জৈবিক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে নিতে হয়। চাষের সময় চুন পাউডার জমিতে ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। প্রতি বর্গমিটারে ৪-৫ কেজি পচাঁ গোবর, ১৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে ভালভাবে জমিতে মেশাতে হবে। বেডের প্রস্থ ১ মিটারে সীমাবদ্ধ রাখলে আন্তঃপরিচর্যা নিতে সুবিধা হয়। মাটিতে চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারি ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে। প্রতিদিন চারা হাল্কা সেচের প্রয়োজন। চারা একটু বড় হলে গোড়ায় মাটি তুলে দিলে ফুলের আকার বড় হয়। চারা লাগানোর ২ মাস থেকেই ফুল আসতে শুরু হয়।
প্রতি ডালে গড়ে ২০-২৫টি ফুল ফোটে বিধায় একেকটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৮০-৯০টি ফুল পাওয়া যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ফুল ফুটলেও সারা বছর ফুল উৎপাদন সম্ভব। জুন-জুলাই মাসে ফুলের বীজ বপন করতে হয়। রোগ ও পোকামাকড়ের সমস্যা নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নন্দিনী ফুলদানিতে ১০-১৫ দিন ভাল থাকে। তবে ফুলদানিতে সামান্য সুক্রোজ মিশিয়ে এ দৈর্ঘ্য ২০-২৫ দিন রাখা যায়। নন্দিনী বীজ উৎপাদন খুবই সহজ, প্রচলিত পদ্ধতিতে মাঠে বীজ উৎপাদন সম্ভব। নন্দিনী ফুলের লম্বা বোঁটা ও বর্ণ বৈচিত্রতার কারণে এবং চাহিদা পৃথিবীজুড়ে।