গন্ধরাজ ফুল আমাদের দেশে সব মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি ফুল। এই ফুল মিষ্টি ও তীব্র সুগন্ধের জন্য বেশ জনপ্রিয়। সুগন্ধে সেরা বলে এর নাম গন্ধরাজ। ফুল আকার-আকৃতিতে গোলাপের মতো। রং ধবধবে সাদা। গন্ধরাজ Rubiaceae বা কফি পরিবারের গার্ডেনিয়া গণের অন্তর্ভুক্ত একটি বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় সপুষ্পক চিরসবুজ উদ্ভিদ।
এর আদিনিবাস চীন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gardenia jasminoides। এই ফুলটি গার্ডেনিয়া এবং কেপ জ্যাসমিন নামেও পরিচিত। গুলচন্দ, বুঙ্গা চায়না, গার্ডেনিয়া প্রভৃতি নামেও ডাকা হয় । আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড: আলেকজেন্ডার গার্ডেন (১৭১৩ – ১৭৯১) এর নাম অনুসারে এই ফুলের ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে। বাংলা নামটি স্পষ্টতই এর তীব্র সুগন্ধি চরিত্রের পরিচয় বহন করে।
এশিয়ার ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চীন, কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান, মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশে এবং সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। উষ্ণ, নাতিশীতোষ্ণ এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে গন্ধরাজ ভালো জন্মে। এর পাতা ঘন সবুজ এবং ফুল সুগন্ধি। গন্ধরাজ গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত উচু হতে পারে। তবে ছেঁটে ছোট করে ঝোপাকৃতি করে রাখা যায়।
গন্ধরাজের পাতার রং গাঢ় সবুজ এবং চকচকে । পাতা ৫ সে.মি. থেকে ১৫ সে.মি. লম্বা এবং ৩ সে. মি. থেকে ৫ সে.মি. চওড়া হতে পারে। ফুলের রং সাদা বা দুধ সাদা। ফুল আকৃতি ১০ সে.মি. পর্যন্ত বড় হতে পারে। পাপড়ির সংখ্যা ৫টি থেকে ১২টি। গন্ধরাজ ফুল একক বা একসাথে ২/৩ টি ফুলের ছোট স্তবক হিসেবে ফোটে। উপযুক্ত পরিবেশে গাছ ভরে ফুল ফোটে।
গন্ধরাজের অনেক গুলি প্রজাতি রয়েছে। কিছু প্রজাতি বুনো, যা উপযুক্ত পরিবেশে অযত্নেই জন্মাতে এবং ফুল ফোটাতে দেখা যায়। বাগানে বা পার্কে সাধারণত ডাবল পাপড়ির ফুলগুলি দেখা যায়। গন্ধরাজ চাষে তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয়না। উচ্চ আর্দ্রতা সমৃদ্ধ আবহাওয়াতে এবং অম্লীয় মাটিতে এর ফুল ভালো হয়। গন্ধরাজ সরাসরি মাটি ও টবে উৎপাদন উপযোগী ফুলগাছ।গ্রীষ্ম থেকে শরৎ পর্যন্ত ফুল ফোটে। ফুল শেষে ছোট, ডিম্বাকৃতি ফল হয়।
গাছের প্রায় প্রতি শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে। অনেকটাই গোলাপের মতো। রং দুধ সাদা। নমনীয় কোমল অসংখ্য পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট। ফুলের মাঝের অংশে হলুদ রঙের পরাগ অবস্থিত। ফুল ফোটে রাতের বেলা; আর তাই রাতের বেলা ও ভোরবেলা বাগানের চারপাশ সুগন্ধে মাতোয়ারা করে রাখে। ফুল ফুটন্ত গাছের সৌন্দর্য বেশ মনোমুগ্ধকর।
আমাদের দেশে বসতবাড়িতে, অফিস-আদালতের প্রাঙ্গণে গন্ধরাজ চোখে পড়ে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বাসাবাড়ির সীমানায় জীবন্ত বেড়া ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেকেই গন্ধরাজ ফুলের কাটিং রোপণ করে থাকেন। রোপণ করা গাছ ঝোপালো আকার ধারণ করে বলে দেখতে সুন্দর দেখায়। গন্ধরাজ ফুলগাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা বেশ শক্ত মানের হয়ে থাকে।
গন্ধরাজগাছের নানা ঔষধি গুণও রয়েছে। তাই আয়ুর্বেদে গন্ধরাজ ফুলের অনেক ব্যবহারের কথা শোনা যায়। ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি প্রস্তুত করা যায়। ডাল কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। সরাসরি মাটি ও টবে রোপণ উপযোগী ফুলগাছ। ফুল ফোটার সময়টাতে বিভিন্ন পতঙ্গের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। এই ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী তৈরি করা হয়।
এ গাছের বংশবৃদ্ধির কৌশলও অত্যন্ত সহজ। ডাল কেটে পুঁতে দিলেই বেঁচে যায়। মাত্র দু’এক বছর পরই দিব্যি ফুল ধরতে শুরু করে। এভাবেই গাছটির বিস্তার ঘটে সব জায়গায়। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গন্ধরাজ ফুল গাছ চোখে পড়ত। এ ফুলের গন্ধ একেবারেই স্বতন্ত্র। গ্রীষ্মের বাতাসে মাতাল করা সুগন্ধ ভেসে বেড়ায়। বিশেষত রাতের অন্ধকারে গন্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। সহজলভ্য, পুষ্পপ্রাচুর্য এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে গন্ধরাজ ফুল গ্রামেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গাছটি গঠন বিন্যাস এবং ফুলের সুগন্ধের জন্য সব জায়গাতেই সমাদৃত। আমাদের পার্ক ও উদ্যানগুলো গন্ধরাজ ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। কেউ কেউ আবার ডালপালা ছেঁটে, মাথা মুড়িয়ে তাতে অন্যরকম সৌন্দর্য খুঁজে পান। চিরসবুজ এ গাছটি প্রায় ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।