অড়বরই বা অরবড়ই একটি ছোটো অপ্রচলিত টক ফল। দেখতে অনেকটা আমলকীর মতো। গায়ের রং হালকা হলুদ। তবে ফলটির ত্বক মসৃণ। এটি প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। আমাদের দেশে এই ফলের এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন নাম রয়েছে। বাংলায় লাটকন নামেও পরিচিত। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং সহজেই চাষযোগ্য। ফলটির ব্যাস ০.৫ থেকে ১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। দেখতে হাল্কা হলুদ রং এর এই ফল এর ত্বক খাঁজ কাটা থাকে।
অরবড়ই’র ইংরেজি নাম Otaheite gooseberry, Malay gooseberry, Tahitian gooseberry, country gooseberry, star gooseberry, West India gooseberry ইত্যাদি। অরবড়ই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus acidus, যা Phyllanthaceae পরিবারভুক্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফলটিকে নইল, নলতা, লেবইর, ফরফরি, নোয়েল, রয়েল, আলবরই, অরবরি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। পৃথীবির অনেক স্থানে অরবড়ই গাছ লাগানো হয় সৌন্দর্য-বৃক্ষ হিসেবে। বাংলাদেশে এই ফলকে নইল এবং রয়েল নামেও ডাকা হয়।
গাছ সাধারণত মাঝারি আকারের ৩০ ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে এবং এর ছাল রুক্ষ হয়। গাছের পাতা সরল এবং একান্তর। গাছে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল জন্মে। পাতাবিহীন শীর্ষে গোলাপী রঙের ফুল হয় এবং এর থেকেই থোকা থোকা ক্ষুদ্রাকৃতির নোয়াড় বা অরবরই জন্মে। বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে গোলাপি রঙের থোকা থোকা ফুল ধরে। আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। পাকা ফল হলুদ ও হালকা সবুজ বর্ণের হয়। ফলটির ভেতরে ঘনসবুজ রঙের আঁটি থাকে।
গুণাগুণঃ
অড়বরইয়ে রয়েছে উত্তম ঔষধি গুণ। অড়বরই প্রচুর ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। এর প্রধান রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে এস্করবিক এসিড, ফাইটোস্টেরল ও স্যাপনিন। এতে প্রচুর পানিও থাকে। অড়বরই এর রস যকৃৎ, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী। এর পাতা গণোরিয়া রোগের উপশমকারী ও আরামদায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এই ফলের বীজে অনুরূপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এর বীজ দিয়ে লিভার অসুখের টনিক বানানো হয়। পেটের অসুখ ও কৃমিনাশক এর বীজ সহায়ক। বেঁটে এর রস চুলের গোড়ায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলের গুড়ি মজবুত করে। সিজনাল জ্বর প্রতিরোধে ও মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে ফলটি বেশ কাজ করে।