বেল আমাদের সবার সুপরিচিত পুষ্টিকর আর উপকারী ফল। কাচা পাকা দুটোই সমান উপকারী। কাচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশায় রোগে ধন্বন্তরী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ইংরেজিতে বেলকে ডাকা হয় Wood Apple কারণ এ ফলের খোসা কাঠের মত শক্ত। বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছে Bengal quince। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Aegle marmelos Correa (syn. Feronia pellucida Roth, Crataeva marmelos L)। বেল রুটাসি (Rutaceae) অর্থাৎ লেবু পরিবারের সদস্য। এর সংস্কৃত নাম বিল্ব। ইংরেজিতে অনেকেই stone apple বলে।
বেল বা বিলি বা ভেল নামে পরিচিত, এছাড়াও বেঙ্গল কুইন্স , সোনালী আপেল ,জাপানি তেতো কমলা ,পাথরের আপেল বা কাঠের আপেল ,ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রজাতির গাছ। এটি ভারত , পাকিস্তান , বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে প্রাকৃতিক প্রজাতি হিসেবে পরিচিত ।
বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। বেল গাছ বড় ধরনের বৃক্ষ যার উচ্চতা প্রায় ১০-১৬ মিটার। শীতকালে সব পাতা ঝরে যায়, আবার বসন্তে নতুন পাতা আসে। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত, সবুজ, ডিম্বাকার ; পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচাল। ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের। বোঁটা ছোট, ৪-৫টি পাঁপড়ি থাকে, পুংকেশর অসংখ্য, গর্ভাশয় বিস্তৃত ও কেন্দ্রস্থল খোলা। ফুলে মিষ্টি গন্ধ আছে।
ফল বড়, গোলাকার, শক্ত খোসাবিশিষ্ট। ফলের ভিতরে শাঁস ৮-১৫টি কোয়া বা খন্ডে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি ভাগে বা খন্ডে চটচটে আঠার সাথে অনেক বীজ লেগে থাকে। কাচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। ভিতরের শাঁসের রঙ হয়ে যায় কমলা বা হলুদ। পাকা বেল থেকে সুগন্ধ বের হয়। পাকা বেল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছ যখন ছোট থাকে তখন তাতে অনেক শক্ত ও তীক্ষ্ণ কাঁটা থাকে। গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়।
খাদ্য হিসাবে বেলপাতা
অনেকে মনে করেন প্রতিদিন একটি করে বেল পাতা ঘি দিয়ে ভেজে চিনি সহ খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বেল পাাতায় aegeline নামক এক প্রকার উপাদান থাকে যা ওজন কমানোর কাজে ব্যাবহৃত হয়।
বেল ফলের উপকারিতা
বেলে রয়েছে হাজারও পুষ্টিগুণ। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের বেল খাওয়া একান্ত জরুরি। বেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।’
পাইলস, ফিস্টুলা, এনাল ফিশারসহ মলদ্বারের রোগ যাদের রয়েছে, তাদের জন্য বেল অত্যন্ত উপকারী। এই বেল অনেক উপকারে আসে। বেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে এবং বসন্তকালীন বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
বেলের যে পিচ্ছিল উপাদান বা বীজ রয়েছে, এগুলো অন্ত্রের মধ্যে গিয়ে বিভিন্ন উপকারী পরিবেশ তৈরি করে, ফলে আমাদের খাদ্য সহজে হজম হয়। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন, তাঁরা যদি নিয়মিত বেল খান, তাহলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য সহজে দূর করতে পারবেন। কারণ, বেলে রয়েছে ফাইবার বা আঁশ, যা আমাদের অন্ত্রে গিয়ে উপকারী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি কমায় এবং হজমে সহায়তা করে।
নিয়মিত বেল খেলে বিভিন্ন রকম জটিল সমস্যা থেকে বের হয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন পাওয়া যায়। বেলের ভিটামিন এ আমাদের চোখের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পুষ্টি জোগায়। যাঁরা নিয়মিত বেল খান, তাঁরা কোলন ক্যানসার, চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন গ্লুকোমা, জেরোসিস, জেরোথেমিয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন।
সতর্কতা
বেল শরীরের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। বেল খাওয়ার পরিমাণ অতিরিক্ত হলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।